ভোর

কৈশোর (মার্চ ২০১৪)

মামুন ম. আজিজ
  • ১৪
  • ৩৭
অদ্ভুত সুন্দর, অদ্ভুত শান্ত! শান্ত পৃথিবীটা জ্বালাতে আসছে, তারই আগমনী ছটা। ছটার গোলাকার বৃত্ত হচ্ছে প্রসারিত একটু একটু।

একটু একটু আঁধার মিয়ে যাচ্ছে, আলোর বৃত্ত প্রস্ফুটিত হচ্ছে, আকাশটা স্পষ্ট হচ্ছে। স্পষ্ট হচ্ছে মিথুনের দৃষ্টি। জানালার গ্রীলে নকশাটা বেশ, মাকড়শার জালের অনুরূপ। সে জালে এখন ভোরের বাতাস হামাগুড়ি দিচ্ছে। মিথুনের চেহারাতেও সে হাসি ছড়ালো। অনেকদিন পরে এত প্রভাতে উঠল সে। ঐ পাড়ে নারিকেল গাছের একটা সারি আছে, ওটা বাবুলদের বাড়ী। বাড়ির সামনে নারিকেলের সারি। নারিকেলের মাথায় এখনও সূর্য উঠতে পারেনি। এইতো উঠলো বলে। এইতো সময়। কিন্তু কই কেউ ডাকছে না কেনো?

উঠে রেডি হলেই হয়। ওরাও নিশ্চয় রেডি হচ্ছে। মিথুন বাদে আরও সাত বন্ধু। গত সন্ধ্যায় সবার মাঝেই অতি উচ্ছাস ছিলো। উচ্ছাসের একটা গভীর অন্তঃটান রয়েছে। সে টানেই মিথুন যে উঠে পড়েছে ফজরের আযানের খানিক বাদেই। অথচ পা উঠতে চাইছে না। বড্ড গোয়ার এই পা, একবার রাতে বিছানার মায়া পেয়েছে তো আর উঠতেই চায় না। কিন্তু মিথুনের কৈশোর প্রাণ, পায়ের বারণ শুনবে কেনো। এই যা আবির না বললো সে রোজ ভোরে ওঠে, তার বাবার সাথে মসজিদে ফজরের নামায পড়ে। সে এই স্কুলের লম্বা ছুটি কিংবা নিত্য দিন ক্লাশ, সব সময়ই। ওরই তো সবার ডাকার কথা। ও বাদে আর সব ক’টা কমবেশি ঘুম কাতুরে। মিথুন আবার সবচেয়ে বেশি। হবে না কেনো রোজ রাতে একটা বা দুটো তো বাজেই। বই পড়ার নেশা শিকড় গজিয়ে নিয়েছে। অথচ এই যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কি অমোঘ টান, আপনাতেই ঘুম ভেঙে গেছে আজ। সে উঠে পড়ে। আবির ডাকার আগেই সে উঠবে, সবাইকে তাক লাগাবে। সবার আগে মাঠে গিয়ে এ মাথা ও মাথা দৌড়াবে। মাঠটা কাছেই। কিন্তু বেশিদিন আর থাকবে না। শুনেছে ওখানে প্লট তৈরী করে বিক্রি করা হবে। এই একটুকরো খেলার মাঠ সবে তাদের পুরো এলাকায়। বিকেলেতো বড় গ্রুপগুলোর কারণে জায়গাই পাওয়া যায় না। ক্লাশ নাইনের ফাইনাল পরীক্ষার পর এই মাসখানেক ছুটিতে তারা উন্মাতাল হবে, খেলায়, দুমড়ে মুচড়ে মাঠের ঘাস তারা ফুটবল খেলবে। প্রভাতের বাতাসে শিহরিত হবে । কেউ মাঠে এসে বাগড়া বসাবে না।

এসব ভাবতে ভাবতে খাট থেকে নেমে বাথরুমের দিকে পা বাড়াতেই হুরমুর করে খাটের এক কোনায় পড়ে গেলো। পায়ের কোথায় যেন জালা করে উঠলো। সূর্যট্ওা ঠিক তখনই নারিকেলের কোনায় প্রথম প্রজ্বলিত হলো, যদিও তখনও সূর্য তার উত্তাপের পোষাক পড়া শেষ করেনি। পায়ে বাঁধা সূতোর কথা বেমালুম ভুলে গেলো কেমনে ভেবে বিস্মিত হলো। ক্ষীণ সূর্যের যেটুকু আলো পায়ের উপর হুমরি খেয়ে তাতে কাটা অংশটা দৃশ্যমান হলো না। হাত দিয়ে টের পেলো ইঞ্চি দুয়েক ছড়ে গেছে। রক্ত পড়ছে। দ্রুত পায়ের দড়ি খুলে ফেললো। ঠিক দড়ি না, খাতা সেলাইয়ের লাল সাদা সূতো আসলে। টানটা এলে ঠিক সে সময়। লাল সাদা সূতো জানালার কৃত্রিম মাকড়শতার জালে একটু ঝুলে ঝুপ করে নিচে চলে গেলো। এই যা ওরাতো ঠিকই এলো, ঠিকই টানও দিলো সুতোয়। বুদ্ধিটা আবিরেরই ছিলো। সবাই ধরেই নিয়েছিল আর কেউ উঠুক না উঠুক মিথুন উঠতে পারবে না। পায়ে সুতো বেঁধে তাই তিন তলা হতে নিচে ঝুলিয়ে দিয়েছিল। আবির সকালে এসে টান দেবে। একবার না হলে দুবার, বারবার ।
জানালার কাছে চলে গেলো । আবির আর সাগর দাঁড়িয়ে আছে। সূতোর মাথা আবিরের হাতে। উপরে তাকিয়ে আবির বলে ডাক দিতেই আবির বলে উঠল, চুপ..যা আমি অনেক আগেই উঠেছি, সাগর হাসছে। ‘হুম , আগে উঠছোস..সবাই মাঠে, তাড়াতাড়ি আসেন ঘুমন্তু মিথুন...’

এমন কথায় রাগ না হযে পাড়ে। উঠলো কত আগে। এখন ওরা সূতো টানার ক্রেডিট নিচ্ছে। এদিকে পা জ্বালা করছে। ভাবে একটু এন্টিসেপটিক দিতে পারলে হতো। দরজার পাশে অন্যখাটে বড় ভাইয়া ঘুমাচ্ছে। ওর টেবিলের ড্রয়ারে আফটার সেভ আছে। একবার কাটা স্থানে লাগাতে পারলে ধপ করে যন্ত্রনা উঠবে তারপর বন্ধ হবে রক্ত। ওদিকে সূর্যটাও নারিকেলে পাতার ভেতর দিয়ে একটু আধটু জ্বলছে। এইনা মাত্র ভোর হলো, আঁধার ধূসর রঙা আকাশ, কত দ্রুত বদলে যাচ্ছে। ভাইয়াকে বিরক্ত করা যাবে না। দশটায় ভার্সিটিতে ক্লাশে যাবে। ঘুম ভঙালে ঘাড়ে গর্দানে খেতে হবে। টেবিলের ড্রয়ার আলতো টানে খুললো না, জোরেও না। টেবিলটা নড়ে উঠল। টেবিলের উপর রাখা চিনামাটির ফুলদানিটাও। ভয়ে মিথুনের মন কেঁপে উঠল। এই না ভাইয়া উঠে যায়। ফুলদানিটা দিয়েছে আলভিনা আপু। সব জানে মিথুন। গোপনে গোপনে ভাইয়া তার প্রেমের আফগানি আপেলের রস গিলছে সে জানে। যাক ভাইযা উঠলো না। ড্রয়ারে চাবি দেয়া সেটা বোঝা গেলো। কি যে আছে এতে আর! সেভিং কীট কেউ লুকিয়ে রাখে, আজব! রাগ হলো মিথুনের। ভাবলো নিজের কাছেই একটা রাখতে হবে। মা কি রাজী হবে? সেভের বয়স কি হয়েছে? মোচটা স্পষ্ট হয়েছ। দাড়ি হলো বলে। জানালার মাকড়শা গ্রীলটা ভেদ করে একবার তাকালা ওপাশে, উফ! সূর্যটা পুরো নারিকেল পাতা জ্বালানোর পক্রিয়া শেষ করেই ফেললো। কখন যাবে সে? ওরা তো খেলে চলেই যাবে। রক্ত বন্ধ হয়েছে। যন্ত্রনা হচ্ছে ভীষন। আর দেরী করলো না। বাথরুম করে দরজা খুলে বেরিয়ে এল। রহীমা বুয়া রান্না ঘরে চুলো জ্বালাচ্ছিলেন, একটু উঁকি দিয়ে কেবল বলে গেলো, দরজাটা লাগিয়ো।

সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে বোঝা গেলো কেবল কাটেইনি। কিঞ্চিৎ খোড়াতেও হচ্ছে।

খেলা শুরু হয়ে গিয়েছিল। বাবুল এর এক দল আরেক দল নাহিদের। বাবুলের প্রতিপত্তি আছে। নরিকেলের সারির সবচেয়ে বড় বাড়িটা তাদের। তার কাছে দামী দামী বল। সাগর অন্যদিকে তুখোড় খেলোয়াড়। বড় ভাইর্ওা মহল্লার টুর্নামেন্টে তাকে ডাকে। সাত জনই চলে এসেছিল সাগরের দলে একজন কম নিয়ে খেলছিল। সেখানে মিথুন ঢুকে গেলো। সবুজ ঘাসে হালকা শিশিরের মিষ্টি পরশ, দূরন্ত প্রভাত। ওদিকে সূর্যের আগ্রাসী আগমন কোথায় ভুলিয়ে দিলো পায়ের কাটা আর ফুলে যাওয়া। দূরন্ত হতে একটুও দেরী হলো না তার।

টের পেল বাসায় যাবার পর। বাবা অবশ্য ভোরের এই বহিঃগমনের প্রশংসা করলেন। বিস্মিতও হলেন। ভাইয়া ভার্সিটির জন্য রেডি হচ্ছিল, বলল, মিথুন দেখা যাবে ক’দিন পারিস। দাদী এসে বললেন, নামাযটা পড়েই বেরিয়ছিলি তো? মিথুনের মাথায় তখন পায়ের ব্যথা লুকানোর চিন্তা। সেই নিয়ে আপ্রাণ প্রচেষ্টা তার। প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতো না, যদি না মার থেকে একটু দূরে দূরে থাকত। মা বলেই কথা। দূরে থাক আর কাছে ধরা তো খেতেই হবে বাছাধন। মাকে কথা দিতে হলো ব্যথা ভালো না হওয়া পর্যন্ত শুধু খেলা বন্ধ। কথা না দিয়ে উপায় ছিলো না। প্রভাতের সেই অদ্ভুত সুন্দর আলো আঁধারী আকাশটা দেখা বন্ধ হয়ে যেত, সবুজ ঘাসে বন্ধুদের সাথে প্রভাতের প্রথমম আড্ডা টা বন্ধ হয়ে যেত। ক’দিন পরেই না হয় খেলবে।



দ্বিতীয় দিনেও মিথুন পায়ে সূতো বেঁধেছিলো। রিস্ক নিতে চায়নি। আজ ভুলও হয়নি। সূতোর টানেই ঘুম ভাঙলো। সাগরের কথা আগের দিনেও সূতোর টানেই ঘুম ভেঙেছিল। ওদের সাথে মিথুন কথায় পেওে ওঠে না। তার আপনা থেকে ওঠার গত দিনের সাফল্য বিনা অর্জনে ( অর্জন আছে তবে সে নেতিবাচক, ব্যথা আর ক্ষত) হারিয়ে গেলো। সে যাক। মা এর উপরে সে বেজায খুশি। খেলতে মা না করেছেন, যেতে মানা করেন নি। রহীমা বুয়াকে বলেছিল মিথুন তাকে ডেকে দিতে। মা অবশ্য ওটাতে বাধ সেঁধেছিলেন, তা তো করবেন ই, ভাইয়ার খুব রাগ। ঘরতো একটাই দুজনের। দরজায় টোকা দিলে কি আর নিস্তার থাকবে কারো। মাঝখান দিয়ে প্রভাতের এই বাইরে গমন পর্বটির সমাপ্তি ঘটবে। দ্বিতীয় দিন বাকী সাতজন খেললো, মিথুন হেঁটে হুটে বেরিযেছে মাঠে। ব্যথা কমার দিকে যাচ্ছিল একদিনেই। মা রাতে গোপনে কি একটা ব্যথার মলম মালিশ করে দিয়েছিলেন। কেউ জানে না। ভাইয়াও না। তৃতীয় দিনেও সূতোর টান লেগেছিল ঘুম ভাঙতে। চতুর্থ দিনে আর লাগেনি। সাগর আর আবীরকে নিচে গিয়ে চমকে দিয়েছিলো। ওরা সূতো ধরে সবে টানটা দিয়েছিলো। চার দিনেই ঘুম ভাঙার অভ্যেস রপ্ত করে ভালোই হলো। সূতো কথা শুনে মা খুব রেগেছিলেন। চোরের ভয় পাচ্ছিলেন। অথবা অজানা কোন শংকা। মিথুন বোঝেনি সে কি শংকা। চোর সূতো ধরে কেমনে ঝুলবে মাথায় ঢোকেনি। তবে মায়েরা অমনই, শংকাটা বেশিই। নাকি মা’র ভূতের ভয় ঢুকেছিলো। রহীমা বুয়া বলছিলো সুতো বেয়ে ভুত ঢুকবে ঘরে। রহীমা বুয়া ভুতের সূতোয় ঝোলা বিশ্বাস করতে পারে অথচ ভূত নেই সেটা বিশ্বাস করানো যায় না। রাতে সূতো বাধার পর পঞ্চম রাতে গাটা সত্যিই ছমছম করছিলো মিথুনের। ভাইযা ঘুমিয়ে পড়েছিলো, টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে একটা থ্রিলার পড়ছিলো, মনে হচ্ছিল সুতো বেয়ে কে যেন উঠছে, সত্যি টান পড়ছিরো তার পায়। ভেবেছিলো মনের ভুল। তবুও মনতো। সূতো সে রাতে খুলেই রেখেছিলো।

পঞ্চম প্রভাতেও ঘুম ভেঙে গেলো যথাসময়ে মিথুনের। সূর্যের আগমনের হালকা কিরণ নরিকেলের পাতায় ফোঁটা ফোঁটা তখনও পড়ত শুরু করেনি। ধূসর আকাশ। একটু শীতল হাওয়ার দমকা বইছে। খোলা জানালায় সে হাওয়ার দাপটে শরীরটা কাঁপছিলো তার।। নারিকেলের সারিগুলো নরছিলো। ধূসরের মাঝে সেগুলো কালো কালো রঙে দীর্ঘ দীর্ঘ হাতের মত লাগছিলো। মাকড়শার জালের গ্রীলের এ পাশে ওপাশে এক আঁধারের সংযোগ অটুট ছিলো। হাত মুখ ধুয়ে এসে মিথুন সেই অদ্ভুত শান্ত মায়ায় অনেক্ষণ তাকিয়ে ছিলো।

হঠাৎই সূর্যের আগমন সুর, ঐ আকাশে ক্ষীণ আলোর বৃক্ত হয়ে প্রসারিত হচ্ছিল। আবির, সগার আর বাবুলকে একসাথে দেখা গেলো। সন্তরপণে বুয়াকে ইশারায় ডেকে ঘরের বাইরে সিঁড়িতে পা রাখল মিথুন। আজ তার পায়ে কোন ব্যথা নেই। ক্ষতটা পুরো শুকিয়ে ঠনঠনে । লাফিয়ে লাফিয়ে নামলো সিঁড়ি দিয়ে। সাগরকে উদ্দেশ্য করে প্রায় চিৎকার করে উঠল মিথূন- দেখেছিস টান ছাড়াও ঘুম ভাঙে। সাগর মানছিলো না। চারজনে এগিয়ে যাচ্ছিল। বাবুলদের নারিকেলের সারি পেরিয়ে ডানের পথ ধরে খালি এলাকার দিকে এগোচ্ছিল। ওখানেই গলিটা শেষ। পাকা রাস্তা ধুলোতে হারিযে গেছে। কয়েকটা বড় বড় গাছ প্রহরীর মত দাঁড়িয়ে আছে। গলির মাথায় এখনও আবছা আঁধার।

বাবুলের হাত থেকে বলটা হাতে নিলো মিথুন। তারপর পায়ে। বন্ধুরা তার হাত পায়ের বলের কসরতে খুশি হলো। দল দুটো আজ চারদনি পরে পূর্ন হতে যাচ্ছে। খেলায় মজা হবে। হঠাৎ সাগর বলটা কেড়ে নিতে গেলো। বল লাফিয়ে পড়ল পাকা রাস্তায়। মিথুনও এগোচ্ছে। সাগরও। দুজনে অকারণ এক বল দখলের খেলা শুরু হতে যাচ্ছে। হঠাৎ মিথুনের লাথিটা বলের পেটে বেশ জোড়ে লেগে গেলো। বল দুলাফেই গলির ঐ প্রান্তের কিনারায় ডাস্টিবিনটির দিকে এগিয়ে গেলো এবং ঠিকই প্রবেশ করল পাকা দেয়া দেয়া ভাযা ডাস্টবিনটির ভেতরেই। মিথুন এগিয়ে ছিলো। সাগর চেচাচ্ছিল, যা বল ফেলেছিস ময়লায়, তুই ই আনবি। মিথুন আনতেই যাচ্ছিল। সাগরের কথায় সে ভ্রুক্ষেপ করলো না। তবে একবার রাগান্বিত মুখ টা দেখালো ঠিকই ঘুরে। তারপর সামনে তাকাতেই দেকলো ডানের বিল্ডিংটার আড়ালে চলে গেলো যেন একটা ছায়ামূর্তি। চোখ কচকালো। মনে মনে ভাবলো দূর গাছের ছায়া হবে হয়তো। বুকে থুতু দিলো তিনবার। সে ডাস্টবিনটার সামনে পৌঁছে গেছে ততক্ষণে।

সে তাহলে মিথ্যে দেখেনি। কেউ একটু আগেই এখানে এসেছিলো। সবার আগে আবিরকে ডাকলো। একে একে বাবুল আর সাগরকেও। মাঠে অন্য তিন বন্ধুকে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছিল। তারাও বোধহয় লক্ষ্য করল অন্যরা গলিটার প্রাণেÍ কোনার দিকে দৌড়াচ্ছে।

মিথুন থ দাঁড়িয়েছিলো খানিকক্ষন। সামনে কেবল বলটাই নয়, ঠিক তার পাশে পড়ে আশে একটা তোয়ালে মোড়ানো কিছু। সেটা নড়ছে। একটু পড়েই সেখান থেকে কান্নার আওয়াজও ভেসে আসতে শুরু করল। মিথুন এগিয়ে গেলো। পেছণে অন্যরা সবাই চলে এসেছে। একেক জন একেক মন্তব্য করছে। নানান উপদেশ কানে আসছে মিথুনের। অথচ সে কিছুই শুনছে না । কেবল শুনছে তোয়ালে মোড়ানো জিনিষটা হতে কান্নার আওয়াজ। সে এগিয়ে কোলে তুলে নিলো।

পরিশিষ্ট
অদ্ভুত সুন্দর। অদ্ভূত শান্ত!

হালকা একটা কুয়াশার চাদর ছেয়ে আছে ধূসর আকাশটা। বৃক্তাকার একটা আলো প্রসারিত হচ্ছে। মোবাইলে এলার্ম বেজে উঠল প্রসুনের মোবাইলে। হাত বাড়িয়ে এক চাপেই সেটা অফ করল আন্দাজেই। জানালার গ্রীলের মাকড়শা নকশা আর ওপারে প্রভাতের অপূর্ব সূচনাদৃশ্য হতে চোখ ফেরালো না। ওপাশের খাটে মিথুন ভাইয়া ঘূমাচ্ছে। আটটায় অফিস। মিথুন ঘুম থেকে ওঠে ৬ টায়। আরেকটু ঘুমাক। এলার্ম বন্ধ করতে তাই সে দেরী করে না। অথচ সাথে সাথে আবার কল আসে। সবচেয়ে কোøাজ বন্ধু নিবিড়। কল দিচ্ছে। হয়তো নিচে পৌঁছে গেছে জানালার পাশে গিয়ে তাকালো । হুম পৌঁছে গেছে। সাইকেলে বসে এক পায়ে ভর দিয়ে আছে। দ্রুত নেমে হাত মুখ ধুয়ে ঘর থেকে বের হয়ে এলো। আসার আগে বাইরে থেকে টান দিতেই দরজা লক হয়ে গেলো ভেতর থেকে। বড় ভাইয়াকে বলে সে এই এক্সটার্ণাল লক সিস্টেম লাগিয়ে নিয়েছে।

সাইকেল নিচেই থাকে। শিকলের লক লাগানো থাকে। খুলে বেরিয়ে রাস্তায় আসতেই দেখে অর্নবও চলে এসেছে। বাবুল ভাইযাদের নারিকেল সারির পাশ দিয়ে ফুরফুরে হাওযা কেটে তিনজন সাইকেল নিয়ে এগোতে থাকে। গলিটা পেরোলেই নতুন এলাকাটাতে ঢোকা যায়। আগে এখানে মাঠ ছিলো। এখন পরিকল্পিত ভাবে অনেকগুলো ফ্ল্যাট বিল্ডিং উঠেছে। রাস্তাগুলো বেশ বানিয়েছে। ওখানেই তারা সাইকেল চালায়।

গলির যেখানে শেষ আর নতুন এলাকার রাস্তা শুরু। তার ডানদিকে একটা পুরোনো গাছ তলায় এখনও মানুষজন ময়লা ফেলায়। ডাস্টবিন ছিল আগে, দেযাল ভেঙে গেছে পুরোটাই। ময়লা এখন যত্রতত্র ছড়ানো। সেদিকে রোজ চোখ যায় প্রসুনের। আজও গেলো। ক’টা কাক জড়ো হয়ে কিছু একটা ঠোকরাচ্ছে। একটা সাদা তোয়ালে। লাল লাল রক্তের ছোপ। অবশ্য কোন আওয়াজ নেই।...প্রসুন সাইকেল থামায়, বাকী দু’জনও। নিবিড় জিজ্ঞেস করে, কি ওখানে।

প্রসুন সাইকেলটা এগিয়ে নিতে নিতে বলে ওঠে, ওখানে আমার চৌদ্দ বছর আগের অতীত।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তানি হক খুব ভালো লাগলো মামুন ভাই ।। সকালে উঠার এক অপূর্ব দৃশ্য দেখলাম ... নারকেল গাছ । সূর্যের ঝিকিমিকি শেষে এসে গল্পের টান ... উত্তেজনা সব কিছুই উপভোগ করলাম ... সন্দেহ নেই এক গল্পের ভেতর অন্য একটি গল্প ও অনুভব করেছি । আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা রইল । এই গল্পটির জন্য
নাজমুছ - ছায়াদাত ( সবুজ ) খুব সুন্দর লেখা। ভাল চমক ছিল লেখায় । সাধুবাদ ।
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন সব শিশুর কৈশর আসে না...। ভাল লিখেছেন। ভাল লেগেছে। মনে হয় যেন একটু তাড়াহুড়ার মধ্যে ছিলেন। শুভেচ্ছা রইল।
ওয়াহিদ মামুন লাভলু অর্থবহ চিত্র তুলে ধরেছেন। মানসম্পন্ন গল্প। খুব ভাল লাগল। সালাম ও শ্রদ্ধা জানবেন।
মোঃ আক্তারুজ্জামান একটা চমকের মধ্য দিয়ে সুন্দর সমাপ্তি টেনেছেন। শুরুতে বা মাঝখানে অতীতটাকে মেলে ধরলে এই চমকটুকু থাকত না বলেই আমার মনে হয়।
জাকিয়া জেসমিন যূথী অনেকটা গোয়েন্দা টাইপের হয়েছে। এরকম গল্প আমার বরাবরই ভালো লাগে। একেবারে শেষ লাইনটা খুব বেশি পছন্দ হয়েছে।
Salma Siddika আমার কিন্তু ভালো লেগেছে
সকাল রয় মামুন ভাই আপনি গল্প লেখায় আমার চেয়ে অভিজ্ঞ কিন্তু একটা কথা বলি গল্পটাতে মূল বিষয়ের দৃশ্যকল্পের চেয়ে ভাবনার দৃশ্যকল্পটার ভাগ বেশি। মাঝখান থেকে পড়া শুরু করলে খেই হারিয়ে যায়। অতীতের স্মৃতিটাকে আরেকটু খেলো করে দেয়া যেত। আমি কিন্তু বলছি না গল্পটা ভালো হয়নি, আমি শুধু বলছি গল্পটা বড় বেশি একমুখী। ভাই বেশি বলে ফেললাম কিছু মনে করবেন না আবার।
y প্রথম অংশের বাচ্চাটাবই কিন্তু পরের অংশে প্রসূন। ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখানেো হয়েছে। আপনার উপদেশ নিয়ে ভাবছি

০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪